কপোতাক্ষ নদ কবিতা - মাইকেল মধুসূদন দত্ত | কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে তোমাদেরকে 'কপোতাক্ষ নদ ' - মাইকেল মধুসূদনদত্ত  কবিতা শেয়ার করেছি। এবং কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব, ব্যাখ্যা ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নো শেয়ার করেছি এবং কপোতাক্ষ নদ  কবিতা বিশ্লেষণ করেছি চলো দেখে নেই।

কপোতাক্ষ নদ কবিতা - মাইকেল মধুসূদন দত্ত 

কপোতাক্ষ নদ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত 

সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।

সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।

বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।

আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।

নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।

লেখক পরিচিতি:

কপোতাক্ষ নদ কবিতা - মাইকেল মধুসূদন দত্ত | কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা।
নাম: মাইকেল মধুসূদন দত্ত

জন্ম তারিখ: ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি। জন্মস্থান: যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম।

ব্যক্তিজীবন: হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ সৃষ্টি হয়। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তখন তাঁর নামের প্রথমে 'মাইকেল' শব্দটি যোগ হয়৷ পাশ্চাত্য জীবনযাপনের প্রতি প্রবল ইচ্ছা এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যসাধনার তীব্র আবেগ তাঁকে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে।

মহাকাব্য: মেঘনাদবধ কাব্য ।

কাব্য: তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি। নাটক: শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী , পদ্মাবতী। প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা, বুড় সালিকের ঘাড়েরোঁ।

বিশেষ অবদান: বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও বাংলা সনেটের প্রবর্তক। বাংলা ভাষার একমাত্র সার্থক মহাকব্য 'মেঘনাদবধ কাব্য' রচয়িতা।

মৃত্যু: ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জুন।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার মুলভাব

‘কপােতাক্ষ নদ’ চতুর্দশপদী কবিতায় কবি যশােরের সাগরদাড়ির পাশ দিয়ে কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া কপােতাক্ষের প্রতি তাঁর গভীর প্রেমবােধের পরিচয় দিয়েছেন। বিদেশি সাহিত্যে আত্মপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ কবি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে স্বজনহীন জীবনযাত্রার মাঝে শৈশবকৈশােরের স্মৃতিবিজড়িত মাতৃরূপ কপােতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন। তিনি সেখানে এ নদের মায়ামন্ত্র ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। কবি শুনতে পান কপােতাক্ষের কলকল ধ্বনি। তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশােরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তার মনে জাগিয়েছে কাতরতা। 

কবির মন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কপােতাক্ষের তীরে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কবি বহু দেশ ভ্রমণ করে, বহু নদ-নদীর জলে নৌকা ভাসিয়ে, জলে পিপাসা মিটিয়েও দুগ্ধ-স্রোতােরূপী কপােতাক্ষের জলের সেই স্বাদ পাননি। কারণ জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহভােরে তাকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। তার মনে সন্দেহ জাগে, এই নদের দেখা কি তিনি আর পাবেন? তাই তিনি প্রিয় নদের কাছে মিনতি করে বলেন- যদি কোনােদিন তিনি কপােতাক্ষের তীরে আর ফিরে যেতে নাও পারেন তবু যেন কপােতাক্ষ কবিকে মনে রাখে, বাংলার কোটি মানুষের কাছে তার কথা পৌছে দেয়; তাকে যেন সস্নেহে স্মরণ করে।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা।

সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।

ব্যাখ্যা: কবি সবসময়ই তাঁর শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভাবেন। দূর প্রবাসে গিয়েও কবি তার প্রিয় নদের কথা ভুলতে পারেন নি। 

সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।

ব্যাখ্যা: কবির চেতনায় কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি সদা জাগ্রত। কবি যখন রাতে নিদ্রাযাপন করেন তখনও কপোতাক্ষ নদের স্রোত প্রবাহের ধ্বনি তাঁর স্বপ্নে এসে হাজির হয়। স্বপ্নে কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি কবিকে সুখের অনুভূতি দেয়। 

বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে।

ব্যাখ্যা: কবি মধুসূদন দত্ত দেশ-বিদেশের অনেক নদ-নদীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কিন্তু কোনো নদীই তাঁকে কপোতাক্ষ নদের মত বিমোহিত করতে পারেনি।

দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে

ব্যাখ্যা: মায়ের স্নেহ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ কবিকে বড় করেছে। এই নদের জলেই কবি তাঁর স্নেহ তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন। এই কারণেই কবি কপোতাক্ষ নদের জলকে পরম মমতাময়ী মায়ের দুধের সাথে। প্রবাসী কবি কপোতাক্ষ নদের চিন্তায় বিভোর থাকেন। প্রিয় নদের সাথে কবির আর দেখা হবে কিনা- সেই চিন্তা কবি হৃদয়কে ব্যথিত করে তুলে।

প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে

ব্যাখ্যা: প্রজারা যেমন রাজাকে কর প্রদান করে তেমনি কপোতাক্ষ নদও তার জলধারাকে কর হিসেবে সাগরের কাছে প্রেরণ করেছে।

বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।

ব্যাখ্যা: কবির আকুল মিনতি-কপোতাক্ষ নদ যখন বঙ্গবাসীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাবে, তখন কপোতাক্ষ নদ যেন কবির কথা বঙ্গবাসীকে জানিয়ে যায়।প্রবাসে অবস্থান করলেও কবির মন সর্বদা তার প্রিয় মাতৃভূমির কপোতাক্ষ নদের চিন্তায় বিভোর। দূর প্রবাসে বসেও বঙ্গসঙ্গীতের মাধ্যমে কবি তাঁর অতি প্রিয় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা স্মরণ করছেন।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার বহুনির্বাচনী প্রশ্ন।

১. 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতাটি কোন দেশে ছিলেন?
ক. ফ্রান্সে
খ. ইংল্যান্ডে
গ. ইতালিতে
ঘ. আমেরিকাতে

[সঠিক উত্তর: ক ]

২. ‘কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে'? উক্তিতে কবির কোন ভাব প্রকাশ পেয়েছে? - এ
i. মমতা
ii. অনুরাগ
iii. ভ্রান্তি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii

[সঠিক উত্তর: ক ও খ]

অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও: প্রবাস জীবনে ফাস্টফুডের দোকানে

কত খাবার খেয়েছি আমি জীবনে। মায়ের হাতের পিঠার কথা ভুলি আমি কেমনে?

৩.‘কপোতাক্ষ নদ' কবিতার কোন বিষয়টি অনুচ্ছেদটিতে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. সুখ স্মৃতির অনুপম চিত্রায়ন
খ. রঙিন কল্পনার নিদর্শন
গ. কষ্টকর স্মৃতির কাতরতা
ঘ. স্নেহাদরের কাতরতা

[সঠিক উত্তর: ঘ ]

৪. অনুচ্ছেদটির মূল বক্তব্য নিচের কোন চরণে ফুটে উঠেছে?
ক. সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
খ. জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
গ. এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
ঘ. আর কি হে হবে দেখা?

[সঠিক উত্তর: গ ]

শেষ কথাঃ 

কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর লেখা। আজকে আপনাদের কপোতাক্ষ নদ কবিতা শেয়ার করেছি এবং কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন করেছি।  এছাড়াও কপোতাক্ষ নদ কবিতার বহুনির্বাচনী প্রশ্ন শেয়ার করেছি। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আর কোন কবিতা সম্পর্কে জানতে চাও বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দেও। Shikhoit.com এর সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url