শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ১০ টি পুষ্টিকর খাবার

বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবার তালিকা, নবজাতক শিশুর খাবার, শিশুর মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি,

শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক ১০টি পুষ্টিকর খাবারঃ

শিশুকাল থেকেই যাতে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে সেই দিকে প্রতিটি বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখা উচিত। ছোট থেকেই শিশুর খাবার তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখা দরকার যা শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করতে পারে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতই মস্তিষ্ক আমাদের গ্রহণ করা খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ করে নেয়। এ কারণে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যে খাবার গুলো শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে অত্যান্ত কার্যকর।
এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক শিশুর বুদ্ধি বিকাশে কোন খাদ্য গুলি শিশুর খাদ্য তালিকায় রাখবেন বা রাখা জরুরী ---

সবুজ শাকসবজি: 

শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সবুজ শাকসবজির বিকল্প নেই। সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ, সে কারনেই শিশুর খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন নিয়মিত। অনেক সবজি না চাপিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে শিশুকে সবজি খেতে দিন। সবজিতে আরও আছে ফাইবার যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে ব্রকলি এবং ফুলকপিতে আছে নানা উপকারী খাদ্য উপাদান। তাই শিশুকে নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

ওটস:

ওটমিল এবং ওটস শক্তির একটি ভালো উৎস। এগুলো মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়। ওটসে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার, যা শিশুদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। এছাড়া ওটসে রয়েছে ভিটামিন ই, বি-কমপ্লেক্স এবং জিংক, যা শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রেখে বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে।

কলা: 

কলা এমন একটি ফল, যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। সকালে নাস্তার কিছু সময় পর হালকা স্ন্যাক হিসেবে একটি কলা দিতে পারেন আপনার শিশুকে, এর ফলে সকালজুড়েই শিশু তার শরীরিক শক্তি ধরে রাখতে পারবে। এর ফলে যে কোনো কাজে শিশুর মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাও বাড়বে। তাই হালকা স্ন্যাক হিসাবে কলা দিতে পারে। যা শিশুর শারীরিক শক্তির পাশাপাশি বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

চর্বিযুক্ত মাছ:

চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মস্তিস্ক এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। স্যামন, ম্যাকারেল, টাটকা টুনা, ট্রাউট, সার্ডিন - এসব সামুদ্রিক মাছে অতি উচ্চ মাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে। বুদ্ধি বিকাশের জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন আপনার শিশুকে এসব মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

কুমড়ার বীজ: 

কুমড়া যেমন উপকারী তেমনই এর বীজে রয়েছে নানা খনিজ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে। সুতরাং কুমড়ার বীজ না ফেলে দিয়ে শিশুকে ভেজে দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

দুধ, দই ও পনির: 

দুধ, দই ও পনিরে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন এবং ভিটামিন রয়েছে, যা ব্রেনের টিস্যু তৈরীতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই খাবারগুলোতে রয়েছে অতি উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা দাঁত এবং হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।

মধু:

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল ধরনের উপকারীতা রয়েছে মধুতে। মধু সব রোগের নিরাময় করতে প্রয়োজন হয়। মধুতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্যও মধু অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। আর সে কারনেই আপনার শিশুকে খাঁটি খাওয়াতে পারেন।

ডিম: 

শিশুর সকালের নাস্তায় ডিম রাখতে পারেন নিয়মিত। ডিমে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে কলাইন, যা স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে। 

বাদাম:

শিশুকে প্রতিদিনই কয়েকটি করে বাদাম খেতে দিন। কারণ বাদামে রয়েছে ভিটামিন-ই, যা শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে অত্যান্ত সহায়ক। কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনাবাদামসহ যে কোনো ধরনের বাদামই শিশুর বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। তাই নিয়মিত শিশুদের বাদাম দিতে পারেন।

দুধ ও হলুদ:

শিশুকে দুধের সাথে কাচা হলুদ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া বাজারের সয়াবিন না খাইয়ে সরিষা বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে রান্না করে খাওয়াতে পারেন।
শিশুকে যে কোনো খাবার প্রথমে অল্প অল্প পরিমানে খাইয়ে অভ্যস্ত করুন। যদি কোনো খাবারে পেট খারাপ হয় তাহলে সেই খাবার খাওয়ানো কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখুন। আর যদি কোনো খাবারে এলার্জি থাকে তাহলে সেই খাবার খাওয়ানো বন্দ করে দিন। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পাকস্থলিও বড় হবে এবং হজম শক্তিও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে। তাই শিশুকে যে কোনো খাবার ধীরে ধীরে খাওয়ানোর অভ্যস্ত করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url