মাছ চাষের উন্নত লাভজনক কলাকৌশল ও পদ্ধতি

কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি। কোরমা বল পোলাও বল কিছুতেই যেন বাঙালির পেট ভরতে চায় না। মোটা চালের ভাত আর মিঠা পানির মাছ হলে আহা! একদম পেটপুরে খেয়ে ঢেকুর তুলে আমাদের দেশের মানুষ।

 

মাছ চাষের উন্নত  লাভজনক কলাকৌশল ও পদ্ধতি

কী শহর কী গ্রাম সব জায়গায় মানুষেরই প্রিয় খাবার মাছ ভাত। আমরা আলোচনা করব মাছ নিয়ে মাছ চাষ নিয়ে। মাছ এক ধরনের জলজ মেরুদণ্ডী প্রাণী। জলে সাঁতার কেটে বেড়াবার জন্য এদের রয়েছে বিশেষ ধরনের জোড়া পাখনা এবং লেজ। বাঙালির প্রিয় খাবার মাছ বলতে গেলে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। 

মাছ চাষের উন্নত  লাভজনক কলাকৌশল ও পদ্ধতি

সাগর নদী জলাশয়ের পানিতে দূষণ দেখা দেয়ায় মাছ তার বংশ বিস্তার করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি মাছ থেকে। একটা সময় ছিল বাঙালির গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। তাছাড়া খাল বিল ডোবা নালায়ও তখন প্রচুর পরিমাণে মাছ থাকত। ধীরে ধীরে মানুষ বেড়ে যাওয়ার ফলে কোনও বাছ বিচার না করে মাছ শিকার করায় মাছ গেছে কমে। এখন আর পানিতে আগের মতো মাছ নেই। 

চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। আমাদের খালবিলে। চাহিদা বাড়ল অথচ মাছের উৎপাদন বাড়ল না। বরং কমল। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তাই পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের গুরুত্ব রয়েছে। মাছ চাষের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে পুকুর বা জলাশয় এবং মাছ। আমরা প্রথমত এই দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। 

সমস্ত পৃথিবীর তিনভাগের দুইভাগ হচ্ছে পানি আর একভাগ মাত্র মাটি। আবার ওই একভাগের মধ্যেও রয়েছে নদী, খাল বিল, ডোবা জলাশয় । এসব জায়গাতেই মাছ চাষ করা যায়। বর্তমানে সরকারীভাবে বা কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বিশাল জলরাশির মধ্যে মাছের পোনা ছাড়া হয়। তবে আমরা সেই বিশালতায় যাব না। আমরা বদ্ধ পুকুরে মাছ চাষের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব। 

একটা পুকুরকে আমরা মাছ চাষের উপযোগী বলব তখনই যখন ঐ পুকুরের প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক লক্ষণগুলো স্বাভাবিক থাকবে। লক্ষণগুলো হচ্ছে - 

গভীরতা

গভীর পানির মাছ বলে একটা কথা আছে। তবে তা কেবলই কথার কথা । মাছ চাষের জন্য অগভীর পুকুরই ভাল । পুকুরের গর্ত যদি কম হয় তাহলে সূর্যের আলো পুকুরের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছবে। পানি গরম হবে আর মাছ স্বাভাবিক অবস্থা পেয়ে বেড়ে ওঠবে। আর পানি যদি খুব গভীর হয়ে থাকে তাহলে সূর্যের আলো তলদেশে পৌছতে পারবে না। এর ফলে পানি ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। মাছেদের জন্য ঠাণ্ডা অবস্থা মোটেই সহনীয় নয়। তবে পানির গভীরতা যেন আবার তিনফুটের কম না হয় । এর কম হলে সূর্যের প্রখর তাপে পানি গরম হয়ে যাবে। আর এর অবস্থায় মাছের বৃদ্ধি তো দূরের কথা মৃত্যু অনিবার্য। 

ঘোলা পানি

পানি যদি ঘোলা হয় তবে সেই পানিতে মাছ চাষ একদম অনুপযোগী। এ কারণে মাছ চাষের জন্য দরকার স্বচ্ছ পানির পুকুর বা জলাশয় । 

পানির তাপ

পানির তাপ বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকমের তাপমাত্রার হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন স্থানের পানিও বিভিন্ন তাপমাত্রার হয়। গরম দেশের মাছ শীতের দেশে এবং শীতের দেশের মাছ গরম দেশে চাষ করা সম্ভব। পানির তাপমাত্রা মাছ চাষের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে যে কার্প জাতীয় মাছ অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস ইত্যাদি মাছগুলো গরম মোটামুটি করতে পারে কিন্তু তাপমাত্রা কমে যাওয়াটা সহ্য করতে পারে না। দেখা গেল হঠাৎ করে ২০ সেঃ তাপ কমে গেল তা কিন্তু কার্প জাতীয় মাছের জন্য দুঃসহ। শীতে ওই মাছের বৃদ্ধি কম হয়।

পানির মধ্যে অক্সিজেন

মাছও মানুষের মতো শ্বাস প্রশ্বাস নেয়। মাছেরা অক্সিজেন গ্রহণ করে। মাছের যে ফুলকো আছে তা পানির মধ্যে অক্সিজেন নিয়ে রক্তের মধ্যকার হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশিয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে এবং সমস্ত শরীরে চালান করে দেয়। একইভাবে ডাই-অক্সি হিমোগ্লোবিনরূপে ফুলকোর মধ্যদিয়েই কার্বনডাই বা দুষিত পদার্থ দেহের বাইরে বের করে দেয়। মাছের চাষ করার জন্য যে পুকুর বা জলাশয় বেছে নেওয়া হবে দেখতে হবে তার মধ্যে অক্সিজেন আছে কিনা। মাছের জন্য অক্সিজেন খুবই জরুরি। তবে মাছের অক্সিজেন দরকার হয় অল্পপরিমাণ। দশ লক্ষ ভাগ পানির মধ্যে মাত্র তিন থেকে পাঁচভাগ অক্সিজেন হলেই চলে। 

কার্বন-ডাই-অক্সাইড

মাছ শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। পানিতে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই- অক্সাইড মাছের জন্য সহনীয় নয়। দশ লক্ষভাগ পানির মধ্যে ১৫ থেকে ২০ ভাগ কার্বন-ডাই-অক্সাইড মাছ সহ্য করতে পারে। এর বেশি হলে মাছ অস্বস্থি বোধ করে তারপরও বাড়তে থাকলে মাছের মৃত্যু হয়। অনেক সময় পুকুরে বা জলাশয়ের তলায় গাছপালা এবং আবর্জনা জমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাই মাছ চাষের উপযোগী পুকুরে অবশ্যই সমস্ত প্রকার গলিত পচা আবর্জনা তুলে ফেলতে হবে। অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ : অন্যান্য তরল পদার্থের মতোই পানি অম্লভাব যুক্ত, ক্ষারভাব যুক্ত বা নিরপেক্ষ হয়ে থাকে । পানিতে ক্ষারতা বাড়লে নিরপেক্ষতা বাড়ে এবং অম্লতা কমে। আর ক্ষারভাব কমলে অম্লতা বাড়ে এবং নিরপেক্ষতা কমে। 


আশাকরি মাছ চাষ নিয়ে লেখা আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। মাছ চাষ সহ কৃষি নিয়ে নানা আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই ধন্যবাদ। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url