ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় | ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে তোমাদেরকে 'ভালোবাসি ভালোবাসি' - (ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) কবিতা শেয়ার করেছি। এবং ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার মূলভাব, ব্যাখ্যা ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নো শেয়ার করেছি এবং ভালোবাসি ভালোবাসি  কবিতা বিশ্লেষণ করেছি।
ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় | ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা।

ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি সুন্দর কবিতা। তুমি যদি ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা জানতে চাও তাহলে এই পোষ্টি তোমার জন্য। ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার বিশ্লেষণ করা হয়েছে আজকের আরটিকেলে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতা। 
  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার কবি পরিচিতি।
  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার মূলভাব
  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার ব্যাখ্যা।
  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার বিশ্লেষণ। 
  • ভালোবাসি ভালোবাসি কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর। 

ভালোবাসি, ভালোবাসি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

-------------------------------------------------------------------

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,

রাত জেগে পড়ার

টেবিলে বসে আছ,

ঘুম আসছে না তোমার

হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-

ভালবাসো?

তুমি কি রাগ করবে?

নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..


ধরো ক্লান্ত তুমি,

অফিস থেকে সবে ফিরেছ,

ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,

খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে

ঘর্মাক্ত আমি তোমার

হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো?

তুমি কি বিরক্ত হবে?

নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..



ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,

সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি

দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম

শতব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?

তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?

নাকি হেসে উঠে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..


ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,

মাথার উপর তপ্ত রোদ,

বাহন পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময়

হঠাত দাঁড়িয়ে পথ

রোধ করে যদি বলি-ভালবাসো?

তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?

নাকি রাস্তার সবার

দিকে তাকিয়ে

কাঁধে হাত দিয়ে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..


ধরো শেভ করছ তুমি,

গাল কেটে রক্ত পড়ছে,

এমন সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি- ভালবাসো?

তুমি কি বকা দেবে?

নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার

গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল গলায় বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..


ধরো খুব অসুস্থ তুমি,

জ্বরে কপাল পুড়েযায়,

মুখে নেই রুচি,

নেই কথা বলার অনুভুতি,

এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার মুখের

দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?

তুমি কি চুপ করে থাকবে?

নাকি তোমার গরম শ্বাস আমার শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি..



ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,

প্রচন্ড যুদ্ধে তুমিও অংশীদার,

শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর

এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়

জিজ্ঞেস করলাম-

ভালবাসো?

ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও….

নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস দেবে, বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…….


ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ

তুমি,

দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,

হঠাত বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাসো?

কটাক্ষ করবে?

নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি


ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,

আশ্রয় নেই

বিধাতার দান এই পৃথিবীতে,

বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি

এমন সময় তোমার

বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাসো?

তুমি কি সরিয়ে দেবে?

নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি..


ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,

আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ

হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-

ভালবাসো?

চুপ করে থাকবে?

নাকি সেখান থেকেই

আমাকে বলবে,

ভালোবাসি, ভালোবাসি…..



যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,

না থাকলেও দূর

থেকে ধ্বনি তুলো,

ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি..



দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,

বুঝব তুমি আছ, তুমি আছ

ভালোবাসি,ভালোবাসি……..! 


কবি পরিচিতিঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলা ভাষায় এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্‌ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক", "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি "কাকাবাবু-সন্তু" নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url